চলুন , ওষুধ ছাড়াই মাথা যন্ত্রণা সারিয়ে ফেলি !
ধরুন আপনি কোনো কাজে বা অকাজে বাইরে এমন একটা জায়গায় আছেন যেখানে হাতের কাছে কোন ডাক্তার বা ওষুধের দোকান নেই। আর আপনার কাছেও কোন ওষুধ নেই। এদিকে মাথার যন্ত্রণায় আপনার নিজের মাথা ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। কী করবেন ?
কিংবা ধরুন : আপনি এই মুহূর্তে ট্রেনের মধ্যে । এদিকে মাথা-ব্যথায় মাথা কেটে ফেলার জোগাড়। কিন্তু ব্যাগেতো ওষুধ নিয়ে বের হননি।
বা মনে করুন বাড়িতে কেউ একজন খুব অসুস্থ।রাত জেগে আপনার মাথা এমন যন্ত্রণা করছে আপনি চুপ করে থাকতে পারছেন না।কিন্তু তার অসুস্থতাটা এতই বেশি যে আপনার প্রচন্ড মাথাযন্ত্রণা করলেও সেখানে আপনার কথা জানাতে পারছেন না।
হয়তো এমন হল আপনার কোনো কাছের মানুষ মাথার যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছেন। কিন্তু তিনি যখন তখন ওষুধ খেতে পছন্দ করেন না ( অবশ্য ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়াও উচিত নয়)। কী করবেন ? কেবল বসে বসে তার কষ্ট দেখবেন ?
চলুন দেখি কিছু করা যায় কিনা ।
কেন মাথা-যন্ত্রণা ?
মাথার যন্ত্রণা নানা কারণেই হতে পারে। ঠাণ্ডা লাগলে ,বদহজম-গ্যাস-অ্যাসিড হলে , টেনশন করলে ইত্যাদি ইত্যাদি। বলে শেষ করা যাবেনা।
মূল বিষয় হল এটা- আমাদের শরীরে হৃদপিণ্ড থেকে শরীরের নানা অংশে রক্ত সঞ্চালিত হয়।যখন সেটা উপরোক্ত বা তার বাইরের নানা কারণের জন্য বিঘ্নিত হয় তখন নানা ধরণের সমস্যার সূত্রপাত।মাথার যন্ত্রণাও তাই।
ওষুধ ছাড়া কিভাবে নিরাময় করা যেতে পারে ?
তাহলে দেখা গেল শরীরের নানা অংশে অক্সিজেন সহ রক্ত সঞ্চালনের অসুবিধা হওয়ার জন্যে এই সমস্যা। যদি এই সমস্যাটা দূর করা যায় তবে সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।
কিন্তু কী ভাবে বা কোন পদ্ধতিতে এটা করা যেতে পারে ?
অ্যাকিউপ্রেসার পদ্ধতির মাধ্যমে এটা সম্ভব।
অ্যাকিউপ্রেসার নামই তো শুনিনি ! তা ভালো , এটা খায় না মাথায় দেয় ?
না , আপনাকে খেতেও হবে না , মাথায়ও দিতে হবে না। অ্যাকিউপ্রেসার একটা পদ্ধতি। এই পদ্ধতি বিশ্বাস করে যে আমাদের শরীরে যত স্নায়ু আছে তার একটা অংশ এসে মিশেছে আমাদের হাতের তলায় ও পায়ের তলায়। শরীরের যে অংশে অসুবিধা , সেই স্নায়ুর উপর আপনি যদি প্রেসার দিয়ে তার কাজকে সচল বা সুস্থ করে তুলতে পারেন তবে যন্ত্রণা নিরাময় হবে।
ও এতক্ষনে নামটা যেন একটু চেনা চেনা লাগছে ? কি যেন , কি যেন , ও হ্যাঁ , মনে পড়েছে আকুপাংচার। আপনি আকুপাংচারের কথা বলছেন তাহলে ?
হ্যাঁ আমি তার কথা বলছি , আবার বলছিও না। আপনি যার কথা বললেন , আর আমি যার কথা বলছি দুটোরই উদ্দেশ্যটা এক বটে। তবে কাজ করার ধরণটা আলদা।
আকুপাংচারে শরীরের ক্ষতিপ্রাপ্ত ঐ অংশ গুলোতে ছুঁচ ফুটিয়ে ছুঁচের ডগার মাধ্যমে প্রেসার দেওয়া হয়। আকিউপ্রেসারে ছুঁচ না ফুটিয়েই অ্যাকিউপ্রেসারে ব্যবহৃত যন্ত্রের সাহায্যে এই প্রেসার দেওয়া হয়।অবশ্য এই যন্ত্র আপনি নিজেই তৈরী করে নিতে পারবেন যেমন ধরুন পেনসিলের ডগা বা কিছু না পেলে আপনার আঙুলের সাহায্যেও এই কাজটা করতে পারবেন।
কিন্তু আকুপাংচারের সুঁচ ফোটানোতো অভিজ্ঞ ব্যক্তি ছাড়া অসম্ভব।
মানে দাঁড়াল গিয়ে এই – আকুপাংচার থেকেই অ্যকিউপ্রেসার এসেছে, তাইতো ?
না ,মোটেই তা নয় বরং অ্যাকিউপ্রেসার অনেক পুরনো পদ্ধতি। তা থেকেই পরবর্তীতে আকুপাংচার এসেছে।
প্রমাণ আছে কি কিছু এই পদ্ধতির প্রয়োগ সম্পর্কে ?
এই উপমহাদেশেই তিন হাজার বছর পূর্বে এর সূচনা হয়েছিল। চরক-সুশ্রুতের নাম শুনেছেন নিশ্চয়ই। সুশ্রুতের রচনায় এর প্রমাণ আছে। আমাদের দেহের মধ্যেই অবস্থিত প্রকৃতির নিজস্ব বিজ্ঞান থেকেই অ্যকিউপ্রেসারের জন্ম। ষোল শতাব্দীতে রেড ইন্ডিয়ানরাও রোগীর হাত-পায়ের তেলোর বিভিন্ন অংশে চাপ দিয়ে রোগ নিরাময় করত।মার্কিন দেশের ডাক্তার উইলিয়ন ফ্রিটজজেরালড প্রমুখ ব্যক্তিরা গবেষণা করে এই চিকিৎসা বিজ্ঞানকে আধুনিক যুগের আলোয় নিয়ে এসেছেন।সবচেয়ে বড় কথা এর কোন সাইড এফেক্ট নেই।
আমার মাথা যন্ত্রণা করছিল না কিন্তু এখন আপনার বকবকানি শুনে মাথাযন্ত্রণা শুরু হয়ে গেল ।
বা , তাহলেতো বেশ ভালোই হল । একেবারে হাতে কলমে পরীক্ষা করে নিতে পারবেন ।
দেখুন আমি নিচে হাতের ছবি দিয়েছি।
যেখানে গোল করা আছে ঐ অংশটা ভালো ভাবে লক্ষ করুন।
এবার আপনার একহাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে অন্য হাতের ঐ অংশ জুড়ে বারবার প্রেসার দিন।একটু যেন লাগে। কিছুক্ষণ করতে থাকুন।
এবার হাতটিকে উল্টে নিন ছবির মতো।
আবার বুড়ো আঙুলের সাহায্যে গোলদাগ দেওয়া জায়গায় প্রেসার দিন।
এবার এই হাতকে রেস্ট দিন।একই রকম ভাবে অন্যহাতে কিছুক্ষণ করুন।
এবার পায়ের দিকে লক্ষ করুন ।
গোল দাগ দেওয়া জায়গায় হাতের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে হাতে যেভাবে প্রেসার দিচ্ছিলেন একই রকম ভাবে প্রেসার দিন। কিছুক্ষণ করতে থাকুন।
এবার অন্যপায়ে করুন। পুরো প্রক্রিয়াটা পুনরায় আরো দু একবার করুন।
আর সবশেষে হাতের গোলদাগ দেওয়া জায়গায় কিছুক্ষণ প্রেসার দিন।
এবার পায়ের গোল দাগ দেওয়া জায়গায়
এর কারণ হল এই পদ্ধতিতে বিশ্বাস করা হয় এই জায়গাটাতেই বৃক্কের স্নায়ু আছে। হাতের ও পায়ের যে উপাচার করা হল তার ফলে ঐ অংশ থেকে দূষিত পদার্থ বৃক্কে গিয়ে জমা হয়েছে (বৃক্কের কাজও তো আসলে তাই।)।এই প্রেসারের ফলে বৃক্ককে সুস্থ রাখার উপাচার করা হল।
আর হ্যাঁ যদি মনে করেন অম্বল বা অ্যাসিড থেকে হয়েছে তবে একটা আলু থেতো করে রস খেতে পারেন। কিছুক্ষণের মধ্যে ভালোবোধ করবেন। পাশাপাশি অ্যকিউপ্রেসারটা চালু রাখুন।(তবে খবরদার , যদি সুগার থাকে তবে কোনোমতেই আলুর রস খাওয়া চলবে না।)
যদি না কমে ?
যদি কমে তবে অ্যকিউপ্রেসারের গুণ ,যদি না কমে তবে মনে মনে একটু গালি দিয়েন আমাকে।তবে চেষ্টা করে দেখতে দোষ কী? একটু করেই দেখুন না । ও হ্যাঁ বলতে ভুলে গিয়েছি-মাথা যন্ত্রণা শুরু হবার উপক্রম হচ্ছে বুঝতে পারলে শুরুতেই একটু উন্মুক্ত পরিবেশে হাঁটুন। বাইরের উন্মুক্ত হাওয়া এবং প্রচুর অক্সিজেনের কারণে শুরুতেই আপনার মাথা যন্ত্রণা সেরে যেতে পারে।
good, man. . .
উত্তরমুছুন